নুপা আলম, কক্সবাজার::
কক্সবাজার জেলায় খামারি থেকে পাইকারি ও খুচরা ডিম কে কত টাকায় বিক্রি করবে এটা নির্ধারণ করে দেন একজন ব্যক্তি। তার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ডিম বিক্রির কোনো প্রকার সুযোগ পাওয়া যায় না। একজন পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতা ইচ্ছে করলে সরাসরি খামারির কাছ থেকে ডিম ক্রয় করার সুযোগও নেই। কেননা খামারিরা কোনোভাবেই ওই ব্যক্তির বাইরে অন্য কাউকেও ডিম বিক্রি করেন না। পাইকারি, খুচরা এবং খামারিদের সঙ্গে আলাপ করে মিলেছে এমন তথ্য।
ওই ব্যক্তির নাম খাইরুল বশর। এই খাইরুলের হাতের মুঠোয় কক্সবাজার জেলার ডিম। তিনি মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। বলেছেন, চট্টগ্রামের সিন্ডিকেটের সঙ্গে আলাপ করেই নির্ধারণ করা হয় ডিমের মূল্য।
Rupali Bank
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজারের ডিম নিয়ে যে সিন্ডিকেট রয়েছে তাদের হাতে মুরগির মূল্যও জিম্মি। সিন্ডিকেটটির প্রধান খাইরুল বশর হলেও এই সিন্ডিকেটটির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ১৮৪ জন সদস্য। যারা কক্সবাজার জেলা ছাড়াও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বান্দরবানের একটি অংশে ডিম ও মুরগি সরবরাহ করে আসছে।
Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন
কক্সবাজারের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা দোকানে ১টা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। খুচরা ক্রেতারা এসব ডিম পাইকারি দোকান থেকে ক্রয় করছেন প্রতিটি পৌনে ১৩ থেকে ১৩ টাকায়। আর পাইকারি ক্রেতারা এসব ডিম কিনছেন সাড়ে ১১ থেকে সাড়ে ১২ টাকায়। কিন্তু খামারিরা এসব ডিম বিক্রি করছেন ৯ থেকে ১০ টাকায়।
তাহলে খামারির কাছ থেকে পাইকারি বা খুচরা ক্রেতারা ডিম ক্রয় করে বিক্রি করছেন না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মিলেছে ডিম সিন্ডিকেটের নেপথ্যের কথাটি।
আলাপকারী সব পাইকারি ও খামারিরা এককথায় স্বীকার করেছেন, পাইকারি ক্রেতারা ইচ্ছা করলেই খামারির কাছ থেকে ডিম ক্রয় করতে পারেন না। আর খামারিরাও পাইকারিদের সরাসরি বিক্রি করতে পারেন না। এই উভয় পক্ষ পুরোটাই জিম্মি একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাতে।
রামুর জোয়ারিয়া নালার এক খামারির কাছে ডিমের দাম জানতে চাইলে তিনি বলতে অস্বীকার করেন। তিনিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে ডিম উৎপাদন করলেও ডিমের দাম নির্ধারণ হয় খাইরুল বশরদের নির্দেশে। কারণ তারা আমাদের আগে থেকে টাকা দিয়ে কিনে নেয়। আর আমাদের চেয়ে বাড়তি লাভ করে। অনেক সময় আমাদেন লোকসান হলেও তারা ঠিকই লাভ করে।’
এই প্রসঙ্গে জানতে খাইরুল বশরের সঙ্গে কথা হলে তিনি স্বীকার করেন, প্রতিদিন কক্সবাজারে ডিমের দাম নির্ধারণ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠান। এ ছাড়া স্বীকার করেন, তারা অগ্রিম টাকা দিয়ে খামারিদের ব্যবসায় সহযোগিতা করেন।
কীসের ওপর ভিত্তি করে তিনি ডিমের দাম নির্ধারণ করছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তার ইচ্ছামতো ডিমের দাম নির্ধারণ হয় না। মূলত এই দাম নির্ধারণ হয় চট্টগ্রামের ডিমের পাইকারি বাজার থেকে। ওখান থেকে দেওয়া নির্ধারিত দাম অনুযায়ী কক্সবাজারের ডিমের দাম নির্ধারণ হয়। কারণ কক্সবাজারে উৎপাদিত ডিম স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রামের বাজারে নেওয়া হয়।
এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসন বরাবরই মাঠে বলে দাবি করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণবিষয়ক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিংয়ে ডিম সিন্ডিকেট বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিন্ডিকেট এখনও বিদ্যমান।
পাঠকের মতামত